Tele Gynecology, Sweden

Telegynecology, Sweden

গর্ভস্রাব (Miscarriage)

ডা: কামাল আহমেদ

গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং টেলিমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার

নিশপিং হাসপাতাল, সুইডেন


গর্ভাবস্থার ২২ সপ্তাহ পর্যন্ত যদি গর্ভস্থ ভ্রূণের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে সেটাকে আমরা গর্ভস্রাব বা মিসক্যারেজ বলি। সব নিষিক্ত ডিমের আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ শতাংই মায়ের জরায়ু থেকে বের হয়ে যায় এবং তার ফলশ্রুতিতে গর্ভাবস্থার অবসান ঘটে। বেশিরভাগ সময়ই এটা ঋতুচক্রের বা মাসিকের প্রথমেই ঘটে ফলে বেশিরভাগ মায়েরা এটা বুঝতে পারেন না। এবং সাধারণত মহিলারা এটা কে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি রক্তস্রাব হিসেবেই মনে করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর জন্য ডাক্তার বা হাসপাতালে যোগাযোগ এর প্রয়োজন হয় না।


গর্ভস্রাবকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব যা গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহের মধ্যে ঘটে। আরেকটি হচ্ছে বিলম্বিত গর্ভস্রাব যা গর্ভাবস্থার ১৩ থেকে ২১ সপ্তাহের মধ্যে ঘটে।

গর্ভস্রাব হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত। স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভস্রাবকে কখনো ঠেকানো যায়‌ও না, উচিতও না।


 গর্ভকালীন ২২ সপ্তাহের পর থেকে গর্ভস্থ ভ্রুণকে সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গর্ভকালীন ২২ সপ্তাহের পর থেকে  মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু হলে সেটাকে আমরা ইন্ট্রাইউটেরাইন ডেথ (intrauterine death) অথবা গর্ভস্থ সন্তান মৃত্যু বলি এবং জরায়ু থেকে সেই মৃত সন্তানের বহির্গমন কে আমরা মৃত সন্তান প্রসব বলি। এবং সেই সব মৃত সন্তানকে যার যার ধর্ম মোতাবেক শেষকৃত করে কবর দিতে হয়।


 

প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব (Early miscarriage)


প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব গর্ভাবস্থা ১২ সপ্তাহের মধ্যে ঘটে থাকে। পরিসংখ্যান মতে পৃথিবীর অর্ধেক মহিলাদেরই তাদের প্রথম গর্ভাবস্থা গর্ভস্রাবের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে।সব মহিলাদেরই দ্বিতীয় বা পরবর্তী গর্ভাবস্থায় গর্ভস্রাব এর ঝুঁকি থাকে ১৫ থেকে ১৭  সাধারণত গর্ভস্রাবের এই ঝুঁকি গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে।


প্রারম্ভিক বা আর্লি মিসক্যারেজ সাধারণত শুরু হয় অল্প রক্তক্ষরণ দিয়ে।  যা সাধারণত কয়েক দিন চলে, তারপরে  রক্ত যাওয়া পরিমাণে বাড়ে। এরপরে রক্তের চাকা যাওয়ার মাধ্যমে গর্ভস্রাব হয়ে যায়।  রক্তের চাকার মধ্যে ভ্রুণ টি থাকতেও পারে,  আবার নাও থাকতে পারে।

বেশিভাগ গর্ভস্রাবের সময় মাসিকের মত তলপেটে ও কোমরে ব্যথা থাকতে পারে। আবার ব্যথা নাও থাকতে পারে। অনেক সময় অল্প অল্প রক্ত না গিয়ে প্রথম দিকেই  রক্তের চাকা সহ গর্ভস্রাব হয়ে যেতে পারে।


প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব এর ক্ষেত্রে শরীর অনেক সময় নিজে থেকে  গর্ভজনিত সব পদার্থ গর্ভাশয় থেকে বের করতে পারেনা। সে ক্ষেত্রে তখন জরায়ু থেকে অনবরত রক্ত যেতে থাকে, যা রোগীর জীবনের জন্য বিপদজনক হতে পারে। সেই অবস্থায় অবশ্যই রোগীকে নিকটস্থ ডাক্তার বা হাসপাতালে সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তখন গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ঔষধ দেন জরায়ু থেকে গর্ভের বাকি পদার্থগুলো বের করার জন্য। অল্প কিছু ক্ষেত্রে যখন ঔষধ কাজ না করে তখন ডি এন্ডসি (D&C) নামক একটি অপারেশন করতে হয়।


অনেক সময় গর্ভের মধ্যে ভ্রুনটি মারা যায় এবং জরায়ু গর্ভের বয়স অনুযায়ী বড় হয় না। সে ক্ষেত্রে কোন রক্তক্ষরণ হয় না এবং মাঝে মধ্যে গর্ভকালীন উপসর্গ‌ও কমে যায়। সে অবস্থাটি নির্ণয়ের জন্য তখন একটি হরমোন পরীক্ষা এবং আলট্রাসনোগ্রাম করা লাগে। এই অবস্থায় তখন ঔষধ দিয়ে গর্ভস্রাব করাতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তখন  ঔষধে কাজ হয় না এবং ফলশ্রুতিতে ডিএন্ডসি অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু খালি করতে হয়।

পরবর্তীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এন্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

 

বিলম্বিত গর্ভস্রাব বা লেইট মিসক্যারেজ

গর্ভকালীন ১২ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে যেসব গর্ভাবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে তাদেরকে বিলম্বিত গর্ভস্রাব বলে। গর্ভস্রাব গর্ভকালীন সময়ের যত দেরিতে হয় ততই তা স্বাভাবিক প্রসবের মত হয়। বিলম্বিত গর্ভস্রাব সাধারণত পানি ভাঙ্গা দিয়ে শুরু হয় তারপর আস্তে আস্তে প্রসব ব্যথা শুরু হয়।  এক্ষেত্রে অবশ্যই নিকটবর্তী হাসপাতালে যোগাযোগ করা বাঞ্ছনীয়। গর্ভস্রাব এর পর সুনির্দিষ্টভাবে ভ্রুণ এবং গর্ভফুল আলাদা করে দেখা যায় এবং ভ্রূণটি নাড়ীর মাধ্যমে গর্ভফুলের সাথে সংযুক্ত থাকে।


বিলম্বিত গর্ভস্রাব এর পরে বুকের দুধ আসা বন্ধ করার জন্য অনেক সময় ঔষধ লাগতে পারে।

বিলম্বিত গর্ভস্রাবের পরেও সাধারণত এন্টিবায়োটিক লাগে না।

গর্ভস্রাব পরবর্তী অবস্থা


গর্ভস্রাব এর পরে সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত রক্ত বা কালো রংয়ের স্রাব যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে সহবাস করা যাবে না এবং পুকুরে বা সুইমিং পুলে নেমেওগোসল করা যাবে না। তবে ঝর্নার পানিতে গোসল করা যাবে। অন্যথায় জরায়ুতে ইনফেকশন এর অনেক ঝুঁকি থাকে।

এসময়ের মধ্যে যদি মাসিকের চেয়ে দ্বিগুন পরিমান রক্ত যায় কিংবা জ্বর আসে কিংবা পেটে খুব বেশি ব্যথা থাকে তবে অবশ্যই একজন গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে হয় গর্ভাশয়ে গর্ভজনিত কোন পদার্থ অবশিষ্ট আছে কিনা। যদি কোন গর্ভজনিত পদার্থ অবশিষ্ট থাকে সে ক্ষেত্রে আবার ঔষধ দিয়ে জরায়ু টি খালি করার চেষ্টা করা হয়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই তখন ডিএন্ডসি ও করা লাগতে পারে।


গর্ভস্রাব এর ছয় সপ্তাহ পরে প্রস্রাবে গর্ভ পরীক্ষা করে দেখতে হয়। যদি গর্ভ পরীক্ষা নিগেটিভ হয় তাহলে গর্ভস্রাব পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরা হয়। যদি প্রস্রাবের গর্ভ পরীক্ষা টি পজেটিভ হয় তাহলে অবশ্যই একজন গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এবং সে ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার পর ডিএনসি অপারেশন লাগতে পারে।

 


গর্ভস্রাবের কারণ

অনেক মেয়েরাই নিজেদেরকে গর্ভস্রাব এর কারণ হিসেবে দোষায়িত করে থাকেন। যা প্রায় একেবারেই ঠিক না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণত ভ্রূণে কিংবা ডিমের মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে। তখন সৃষ্টিকর্তা কিংবা প্রকৃতির প্রদত্ত নিয়মেই গর্ভস্রাব হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় গর্ভস্রাব এর সাথে নিম্নোক্ত কারণগুলোর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল যে নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্যই গর্ভস্রাব হয়ে থাকে।

জীনগত (ক্রোমোজোম) সমস্যা


প্রায় অর্ধেক গর্ভস্রাবই জীনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।  এসব জীনগত ত্রুটি সাধারণত প্রকৃতির ভুল বা বৈচিত্র্যপূর্ণ খেয়ালীপনার জন্য হয়ে থাকে। অনেক সময় এসব ত্রুটি পিতা-মাতার বীর্য কিংবা ডিমের মধ্যেও থাকতে পারে। যদি একই দম্পতির বারবার গর্ভস্রাব হয়, সে ক্ষেত্রে দম্পতিদের দুজনেরই ক্রোমোজোম পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।


ভ্রূনহীন গর্ভাবস্থা

মায়ের গর্ভাশয়ে ডিম বীর্য দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর বিভাজিত হতে থাকে এবং বড় হতে থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির মাধ্যমে একটি ভ্রূণে পরিণত হয়।কদাচিৎ সে নিষিক্ত ডিম টি ভ্রূনহীন হয়। ফলশ্রুতিতে গর্ভাশয়ে ভ্রূণ ছাড়া শুধুমাত্র গর্ভ থলি ও গর্ভফুল তৈরি হয়। পরবর্তীতে তা গর্ভস্রাব হিসাবে জরায়ু থেকে নিষ্কৃত হয়।


গর্ভকালীন সময়ের একেবারে প্রথম দিকে মাঝে মধ্যে নিষিক্ত ডিমের বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কোন গর্ভফুল বা ভ্রূণ সৃষ্টি হয় না এবং গর্ভস্রাব এর মাধ্যমে দা জরায়ু থেকে বের হয়ে যায়। অনেক সময় নিষিক্ত ডিম জরায়ুতে ঠিকমত বসতে পারেনা এবং পরবর্তীতে তা রক্তস্রাবের মাধ্যমে জরায়ু থেকে বের হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মায়েরাই গর্ভাবস্থা অনুভব করেন না এবং তারা সেটাকে দেরীতে আসা মাসিক বলে মনে করেন।


ঔষধ

অনেক ঔষুধের কারণে বিকলাঙ্গ ভ্রূণ তৈরি হয় এবং গর্ভস্রাব এর মাধ্যমে জরায়ু থেকে বের হয়ে যায়। কোন ঔষধ‌ই গর্ভকালীন সময়ে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে একশভাগ নিরাপদ নয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ভ্রূণের গঠন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এই তিন মাস সময়ে বিভিন্ন ঔষধের কারণে ভ্রূণ গঠনের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার ঝুঁকি থাকে। তাই যারা গর্ভবতী অথবা বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ ব্যবহার করা উচিত না। গর্ভাবস্থায় কারণে অকারণে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন বা ব্যথার ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ভিটামিনের অতিরিক্ত ব্যবহারে ও বিকলাঙ্গ ভ্রূণ তৈরি হতে পারে।


মায়ের ইনফেকশন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভফুল‌ই বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে থাকে। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে গর্ভফুল কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থেকে ভ্রুণকে রক্ষা করতে পারে না। ভাইরাস সবসময়ই ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে সহজেই গর্ভফুল পেরিয়ে মায়ের রক্ত থেকে ভ্রূণে প্রবেশ করতে পারে। তাই মায়ের অনেক ভাইরাস ইনফেকশনই গর্ভস্রাব এর কারণ হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভাইরাস হচ্ছে রুবেলা। তাই যারা বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা অবশ্যই আগে রক্ত পরীক্ষা করে দেখে  নিবেন, রুবেলা টিকা দেওয়া আছে কিনা।


ব্যাকটেরিয়ার কারণে মায়েদের শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর থাকলেও গর্ভস্রাব হতে পারে। তাই এটা খুবই জরুরী যে গর্ভাবস্থায় উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর থাকলে অতিসত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।


মায়ের শরীরে টক্সোপলাস্মসিস (Toxoplasmosis) নামক আরেকটি ইনফেকশন হলেও গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে অনেক। এই জীবাণুটি একটি পরজীবী এবং সাধারণত গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগ প্রতিরোধে মাংস ভালো করে সিদ্ধ করে খাওয়া এবং গৃহপালিত পশুর বিষ্ঠা থেকে দূরে থাকা উচিত।


জরায়ুর গঠনগত সমস্যা

যদি কোন মহিলার পরপর তিনটির বেশি গর্ভস্রাব হয় তাহলে তার জরায়ু বা গর্ভাশয় পরীক্ষা করে দেখা উচিত। জরায়ুতে যদি কোন গঠনগত পরিবর্তন বা সমস্যা থাকে তাহলে অনেক সময় ভ্রুনটি ঠিকভাবে বিকাশিত বা বড় হতে পারে না। এবং সেক্ষেত্রেও গর্ভস্রাব হতে পারে। জরায়ুতে এসব গঠনগত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছেজরায়ুর জন্মগত বিকলাঙ্গতা যেমন জরায়ুর গহবরের একপ্রকার দেয়াল, পলিপ, মাংসের গুটি বা ফাইব্রয়েড ইত্যাদি। এসব গঠনগত পরিবর্তন বা সমস্যার মধ্যে অনেকগুলোই অপারেশন করে ঠিক করা যায়।


বিলম্বিত গর্ভস্রাব অনেক সময় জরায়ুর গলদেশের দুর্বলতার কারণেও হতে পারে। ফলশ্রুতিতে জরায়ুর মুখ গর্ভকালীন সময় পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই খুলে গিয়ে গর্ভস্রাব হতে পারে। জরায়ুর গলদেশের এরকম দুর্বলতা খুব বিরল এবং গর্ভকালীন সময়ে তিন থেকে চার মাসের সময় একটি অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এই অপারেশনের নাম শিরোদকার অপারেশন, যেখানে একটি ফিতার মাধ্যমে জরায়ুর মুখ বন্ধ করে রাখা হয় এবং বাচ্চা প্রসবের আগে গর্ভকালীন নয় মাসের সময়  অপারেশনের মাধ্যমে তখন ফিতাটি খুলে দেওয়া হয়।


ধূমপান

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, ধূমপান গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে কি পরিমাণ ধূমপান গর্ভপাত ঘটাতে পারে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সামান্য ধূমপানও যে ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায় সেই বিষয়ে সব গবেষণাকারীই একমত।


মদ্যপান

মদ্যপান যে শুধু মাত্র ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায় তা নয় বরং বিকলাঙ্গ ভ্রূণ তৈরীতেও অনেক প্রভাব ফেলে। গর্ভকালীন অবস্থায় মদ্যপান একেবারেই নিষিদ্ধ।


শারীরিক খেলাধুলা

ধারণা করা হয় শারীরিক খেলাধুলা সাধারণত গর্ভস্রাব এ কোন প্রভাব ফেলে না। যাদের গর্ভস্রাব এর ভয় থাকে তাদের শারীরিক খেলাধুলা এবং ভারী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকাই ভালো। তবে স্বাভাবিক সাংসারিক কাজকর্ম করা এবং হাঁটাচলা করা গর্ভাবস্থার জন্য ভালো। চিকিৎসা বিজ্ঞানে গর্ভকালীন সময়ে সহবাস নিষিদ্ধ নয়।


মানসিক চাপ

মানসিক চাপ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং গর্ভপাতের সাথে মানসিক চাপের কোন সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায় নাই। মানসিক চাপ যে শরীরে বিভিন্ন ধরণের প্রভাব ফেলে তাতে কোন সন্দেহ নাই এবং সেই ফলশ্রুতিতে যে গর্ভপাত হবে না সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ নাই। তাই সব গর্ভবতী মায়েদের কে সকল প্রকার মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা উচিত।


বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি

সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতেই বিদ্যুৎচৌম্বকীয় শক্তি ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত কোন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয় নাই যে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় শক্তি গর্ভ স্রাব এর কারণ হতে পারে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় নাই বলেই যে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় শক্তি গর্ভাবস্থার জন্য ভালো সে কথা ও কোন গবেষণায় নাই।


এক্স-রে এবং পারমাণবিক বিকিরণ

এক্স-রে এবং পারমানবিক বিকিরণ সরাসরি মা এবং তার গর্ভের ভ্রূণ কে ক্ষতি করে। এক্স-রে এবং পারমানবিক বিকিরণ যে বিকলাঙ্গ ভ্রুন এবং ক্যান্সার তৈরি করে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের নাগরিকরা। সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার কারণে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়েছিল তার ফলে এখনও সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মগ্রহণ করে।

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে মায়ের জীবনাপন্ন অবস্থা ব্যতীত চিকিৎসাজনিত এক্স-রে ও নিষিদ্ধ। গর্ভকালীন তিন মাস বয়‌‌সের পর থেকে শুধুমাত্র মা এবং তার গর্ভের বাচ্চার জীবন রক্ষার তাগিদে ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে চিকিৎসা জনিত এক্সরে করা যেতে পারে।

গর্ভস্রাব প্রতিরোধ

প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব যেটা গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত হয়ে থাকে সেটা প্রতিরোধ করা যায় না। অনেক গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ প্রারম্ভিক গর্ভস্রাব প্রতিরোধের জন্যবিভিন্ন প্রকার হরমোন দিয়ে থাকেন। এ ধরনের হরমোন চিকিৎসা উন্নত বিশ্বে এখনো প্রশ্নের মুখে এবং গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি অনুমোদিত নয়।


বিলম্বিত গর্ভস্রাব প্রতিরোধও উন্নত বিশ্বে এখনও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বিলম্বিত গর্ভস্রাব সাধারণত পানি ভাঙ্গার মাধ্যমে শুরু হয় যা পরবর্তীতে গর্ভাশয়ে ইনফেকশনসৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে গর্ভস্রাব প্রতিরোধ মায়ের স্বাস্থ্য এবং জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।


উন্নত বিশ্বে ২২ সপ্তাহের পর থেকে কোন কারনে বাচ্চা প্রসবিত হয়ে গেলে, বাচ্চার জীবন রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। বাচ্চার চিকিৎসার জন্য উন্নত বিশ্বে সে ধরনের প্রযুক্তি ও চিকিৎসা রয়েছে। তবে ২৮ সপ্তাহের আগে প্রসবিত বাচ্চার মানসিক বিকলাঙ্গ হওয়ার ৫০ শতাংশ ঝুঁকি থাকে।

 

গর্ভস্রাব আমাদের কেউরই কাম্য নয়। আমাদের সবারই উদ্দেশ্য হচ্ছে সুস্থ মা এবং তার সুস্থ শিশু। এবং সব ক্ষেত্রেই মায়ের স্বাস্থ্য এবং জীবন সবসময় গর্ভের ভ্রুণ বাবাচ্চার ঊর্ধ্বে।

 

 

লেখকঃ

ডা: কামাল আহমেদ

গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং টেলিমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার

নিশপিং হাসপাতাল, সুইডেন